ভীষ্ম পঞ্চক

রঙিন বাহারি কাচের জাফরির মিষ্টি আলো এসে পড়ছিল চোখে৷ জাফরির ওপারে রাস্তার নিয়ন আলো৷ তিনতলায় উত্তরের বারান্দার কোণে একটা ইজিচেয়ারে আধশোওয়া হয়ে রয়েছেন রমেন্দ্রসুন্দর৷ সন্ধে হয়ে গেছে অনেকক্ষণই৷ তবু এ বাড়িতে এখনও আলো জ্বলে উঠল না৷ শাঁখ বাজল না৷ নিতাইয়ের মা ধুনোটুকুও দিতে উঠল না তিনতলার একফালি ঠাকুরঘরে৷ উমা চলে যাওয়ার পর সকালে যদিও বা এক কাপ চা জোটে, বিকেলে সে গুড়ে বালি৷ দু’চোখেই ছানি পড়েছে বেশ ক-বছরই৷ মানুষজন আবছা বোঝা গেলেও খবরের কাগজের সঙ্গে চোখদুটি বড় বেইমানি করে৷ কার যেন পায়ের আওয়াজে একটু নড়েচড়ে বসলেন রমেন্দ্রসুন্দর৷

–কে?কে যায় ছাদে?

শাড়ির ঘনঘন আওয়াজ ওঠে৷ টর্চের একটুকরো আলো এসে পড়ে বৃদ্ধের চোখে৷

–কে দামিনী?

— হ্যাঁ৷ একটা হালকা উত্তর আসে ওপাশ থেকে৷ দামিনী আজ তাঁরই মতো অবহেলিত৷ উপেক্ষিতা৷ দামিনী ছোট ভাই হরেন্দ্রসুন্দরের বিধবা স্ত্রী৷ তার বড় ছেলে বজু বিদেশে থাকে৷ ছোট ছেলে বলু পাক্কা জুয়াচোর– নোংরা তিকরমবাজ৷তার বউ হেনা তার ওপর দিয়ে যায়৷ চব্বিশ ঘণ্টা তাদের মরণের আব্দার করে৷ গেল মাসে দামিনীকে দিয়ে তাদের অংশ তার নামে লিখিয়ে নিয়েছে৷ রমেন্দ্রসুন্দর তাঁর অংশ লিখে দেননি৷ থানা-পুলিশ, কোর্ট-কাছারিও এই বৃদ্ধ বয়সে করা হয়ে গেছে৷ কিন্তু চামার বলুটা এবার তাদের অংশের টাকা লুটে নিয়ে প্রমোটারকে দিয়ে দেবে তাদের অংশ৷ এই বিশাল বাড়ির অংশ খসিয়ে ফ্ল্যাটবাড়ি করা হবে৷ জীবনের সব সাধ-আহ্লাদ-স্মৃতি‍-সুখ-দুঃখ সব টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়বে শাবল-কোদাল আর গাঁইতির আক্রোশে৷ কিন্তু রমেন্দ্রসুন্দর? তিনি তো কোথাও যাবেন না৷ তাঁর বড় সাধের বাড়ি এই নীলকান্ত সরকার স্ট্রিটের৷ গ্যাসের আলো উঠে যাওয়া তিনি দেথেছেন৷ বাড়ি বাড়ি স্যানেটারি পায়খানাও বসেছে তাঁর চোখের সামনে৷

এইট্টিন হান্ড্রেড ফরটিওয়ানে এই বাড়ি বানিয়েছিলেন নবেন্দুসুন্দর৷ তাঁর মৃত্যুর পর বাবা নীলেন্দ্রসুন্দর বাড়িটাকে মনের মতো করে সাজিয়েছিলেন৷ দোতলা-তিনতলার লম্বা বারান্দায় বাহারি ফুলগাছের টব বসান৷ পশ্চিম আসাম থেকে আনিয়েছিলেন ভালো জাতের ময়না৷ পেতলের দাঁড়ে‍ মাঝে মাঝে তাকে বসিযে বড় আদরে শিখিয়েও ছিলেন বুলি তিনখানা৷ হরু আসে নীলা যায় রমেন্দ্র দাঁড় বয়৷বড় ঠোঁটের রাগি ময়নার বাঁকানো ঠোঁটের কামড়ে তার আঙুলে অনেক রক্তই ঝরেছে এই বারান্দায়৷ সেগুলির দাগ কি মুছে দিতে পারবে ওই ফচকে প্রোমোটার?

–আপনি কি এখন নীচে যাবেন দাদা?

দামিনীর কথায় অস্বস্তি বাড়ে রমেন্দ্রসুন্দরের৷ এই নির্জন তিনতলার ফাঁকা বারান্দায় কী প্রয়োজন পড়ল তার!

— কেন? তোমার কি কোনও কাজ আছে এখানে?

— হ্যাঁ দাদা৷ কোণের ঘরটা আমি একবার খুলব৷

— কোণের ঘর?কেন?

— বিয়ের পালংক আর ড্রেসিং টেবিলটাকে বড় দেখতে ইচ্ছে করছে৷

— কেন? আতঙ্ক ঝরে পড়ে রমেন্দ্রসুন্দরের গলায়৷

গলায় রজনীগন্ধার গোড়ের মালা৷ মেহেন্দি মাখানো হাতটায় কাচের গ্লাস ধরা আছে৷ তার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে ওপাশের একটা শ্বেতপাথরের ছোট্ট টেবিলটায় রাখলেন তিনি৷ তারপর আলমারি খুলে একটা চ্যাপ্টা মতো বোতলের ছিপি খুলে অনেকটা ঢাললেন সেই গ্লাসটায়৷ তারপর এক চুমুকে সবটুকু খেয়ে নিয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট গলায় একবার আঃ আওয়াজ করেই হাসলেন তিনি তার দিকে তাকিয়ে৷

— ওগুলো যে কাল চলে যাবে দাদা৷ বলেই আঁচলে‍ মুখ ঢাকল দামিনী৷ নির্জন বারান্দায় দামিনীর ফুঁপিয়ে ফুঁপি‍য়ে‍ কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ কাঁদছে দামিনী৷ তাঁর বড় আদরের ছোট ভাইয়ের বউ৷ নিঃসন্তান বলে অনেক আশা নিয়ে বংশরক্ষার জন্য হরেন্দ্রসুন্দরের বিয়ে দিয়ে এনেছিলেন তিনি৷ তাই উৎকণ্ঠিত গলায় শুধোলেন তিনি‍–

— ওগুলো চলে যাবে মানে?কোথায়?

— জানি না৷ বলু বলল কাল নাকি কারা এসে ওগুলো নিয়ে যাবে৷ তাই–

কথাটা শেষ করতে পারল না দামিনী৷ বড় বারান্দার একটা মোটা খিলানে গা এলিয়ে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে‍ উঠল৷

— কেন? বলু কি ওগুলো বেচে দেবে? ওগুলো যে বাপ-ঠাকুর্দার স্মৃতি?

— জানি না দাদা৷ কিছু জানি না৷ কান্না বেড়ে যায় দামিনীর৷

— ওফঃ! বুক ঠেলে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল রমেন্দ্রসুন্দরের৷ তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন–

— ও ঘরের আলোও তো খারাপ হয়ে গেছে অনেককাল৷দেখবে কী করে?

— আমি একটা টর্চ এনেছি দাদা৷

— ঠিক আছে যাও৷ খোলো গিয়ে ঘরটা৷ হাতের চেটো দিয়ে চোখের জল মোছেন রমেন্দ্রসুন্দর৷

বহু পুরনো দরজা৷ তালা খুলে জোরে ঠেলতে হয়৷ দামিনীর শরীরে যত জোর ছিল তা দিয়ে ঠেলা দিল৷ কিন্তু কিছুতেই যে দরজা খোলে না!শেষমেষ অসহায় গলায় ডাকল দামিনী–দাদা!

— দরজা খুলছে না তো?– জানতাম আমি৷ কতদিন যে খোলা হয়নি ঘরটা৷ দাঁড়াও–

দু’জোড়া বৃদ্ধ হাতের ঠেলায় ক্যাঁচ-ক্যাঁচ আওয়াজ তুলে খুলল দরজাটা৷ তবে ভেতরে ভ্যাপসানি গন্ধ৷ ভরা অন্ধকারে মোড়া৷

দামিনীর টর্চ জ্বলে‍ উঠল৷ আস্তে‍ আস্তে চোখ সয়ে এলে পুরনো স্মৃতির আলোগুলো যেন ঝলমল করে‍‍ উঠল চোখে‍র সামনে৷ এই সেই বার্মাটিকের খাট৷ রমেন্দ্রসুন্দর বিয়েতে ছোট ভাইকে বউবাজারের বড় ফার্নিচারের দোকান থেকে কিনে দিয়েছিলেন৷

দামিনীর চোখ চিকচিক করে ওঠে৷ এই খাটেই তাদের ফুলশয্যা হয়েছিল৷ অতবড় লম্বা-চওড়া লোকটার কাছে সে তো তখন এইটুকুন!

ফুলশয্যার রাতে ঘরে ঢুকেই তিনি প্রথম হুকুম করেছিলেন– গ্লাসটা ভাল করে ধুয়ে জলটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দাও৷

প্রথমে হতচকিত পরে টেবিলের ওপর সযত্নে ঢাকা দিয়ে রাখা একটা কাচের গ্লাস– কুঁজো থেকে জল নিয়ে গ্লাসটা ধুয়ে দাঁড়িয়ে‍ পড়েছিল দামিনী৷

এবার হিসহিসিয়ে উঠল তাঁর গলা৷– গ্লাস ধোয়া জলটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে এদিকে এস৷

টর্চের আলো পড়তেই চমকে উঠলেন তিনি৷ বেলজিয়াম কাচের একটা ফ্লাওয়ার ভাস৷ একদিকে অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য করা ফ্লাওয়ার ভাস আর একদিকে আয়না৷ দিনে কতবার যে উমা এই আয়নাটায় মুখ দেখত তার ইয়ত্তা নেই৷ ফ্লাওয়ার ভাসটার ভেতর এখনও রাখা আছে কীসের যেন একটুকরো হাড়৷এক মুসলমান ফকির উমাকে বাচ্চা হওয়ার জন্য দিয়েছিল৷

পায়ে পায়ে দামিনী এগিয়ে গিয়েছিল তাঁর দিকে৷ খসখসে নতুন বেনারসিতে মিষ্টি গন্ধ মাখা আওয়াজ৷ গলায় রজনীগন্ধার গোড়ের মালা৷ মেহেন্দি মাখানো হাতটায় কাচের গ্লাস ধরা আছে৷ তার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে ওপাশের একটা শ্বেতপাথরের ছোট্ট টেবিলটায় রাখলেন তিনি৷ তারপর আলমারি খুলে একটা চ্যাপ্টা মতো বোতলের ছিপি খুলে অনেকটা ঢাললেন সেই গ্লাসটায়৷ তারপর এক চুমুকে সবটুকু খেয়ে নিয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট গলায় একবার আঃ আওয়াজ করেই হাসলেন তিনি তার দিকে তাকিয়ে৷ মৃদু স্বরে হাসতে হাসতে বললেন– ওষুধ৷

বিশ্রি ঝাঁঝালো একটা গন্ধে ভরে গেল ঘরটা৷ দামিনী অবাক হয়েছিল ওই বিশ্রি গন্ধের ঝাঁঝালো জিনিসটা উনি কি খেলেন? সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত উনি অনেক গল্প করেছিলেন৷ লজ্জাশীলা নতুন বউয়ের হাতটা ধরে একটা আলতো চুমু খেতেই–

হঠাৎ ঘরের কোণায় ঝনঝন করে কী যেন পড়ে গিয়ে ভাঙার শব্দে চমকে উঠল দামনী৷

— কী হলো দাদা?কী ভাঙল?

রমেন্দ্রসুন্দর তখন নীচু হয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে পাথরের পরিটার ভাঙা টুকরোগুলো কুড়োচ্ছিলেন৷

— অন্ধকারে হাত লেগে পড়ে গেল৷

— থাক৷ থাক দাদা, আমি তুলে দিচ্ছি৷ দামিনীর কথায় ভীষণই অপ্রস্তুত হলেন রমেন্দ্রসুন্দর৷ আমতা আমতা গলায় বললেন–

— টর্চটা একবার আমায় দেবে?

দামিনী টর্চ এগিয়ে দেয়৷ টর্চের আলো পড়তেই চমকে উঠলেন তিনি৷ বেলজিয়াম কাচের একটা ফ্লাওয়ার ভাস৷ একদিকে অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য করা ফ্লাওয়ার ভাস আর একদিকে আয়না৷ দিনে কতবার যে উমা এই আয়নাটায় মুখ দেখত তার ইয়ত্তা নেই৷ ফ্লাওয়ার ভাসটার ভেতর এখনও রাখা আছে কীসের যেন একটুকরো হাড়৷এক মুসলমান ফকির উমাকে বাচ্চা হওয়ার জন্য দিয়েছিল৷ এই আয়নায় দিনে অন্তত একশোবার মুখ দেখত উমা৷ আর বিড়বিড় করে হাড়টা হাতে নিয়ে কী যেন বলত৷ আর? এই ঘরে তারও তো ফুলশয্যা হয়েছিল৷ সেটা দামিনী জানে না৷

নীচ থেকে ভাঙা পরিমূর্তির টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে তাঁর সূচনাকে মনে পড়ে গেল৷ সূচনা উমার মাসতুতো বোন৷ সুন্দরী কেশবতী এবং আধুনিকা৷ ফুলশয্যার রাতে দিদিকে ঘরে ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলেছিল–

— যেন ডাকাতের হাতে দিদিকে তুলে দিচ্ছি৷ নিজের জিনিস সাবধানে‍–

কথাটা মনে লেগেছিল রমেন্দ্রসুন্দরের৷ যদিও তাঁর দশাসই চেহারা৷ তাই বলে কথাটা বলা ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারেননি৷

ফুলশয্যার রাতে উমাকে তিনি বলেচিলেন– দেখ বড় বউ, আমাদের একান্নবর্তী সংসার৷ এবেলা-ওবেলা মিলিয়ে আঠারোটা পাত৷ ছোট ভাই হরুকে একটু দেখো৷ ওকে আমি ছেলের মতো করে মানুষ করেছি৷

সেই যে উমা কথাটা একবার শুনেছিল তা মরার আধঘণ্টা আগেও বলে গিয়েছিল দামিনীকে৷

— আমার তো কোনও ছেলেপুলে হলো না ভাই৷ বজু আর বলুই সব৷ ওরাই আমার সন্তান৷ ওনার কাছে সিন্দুকের চাবি আছে৷ খুলে ওদের সব দিয়ে দিস ভাই৷

অন্ধকার ঘরে কাঁদছে দামিনী৷ রমেন্দ্রসুন্দরের বৃদ্ধ হাতটা মাথায় উঠে এল দামিনীর৷ বললেন–

–কেঁদে‍ আর কী হবে বল?সবই অদৃষ্ট৷ তা তুমি কি বজুর কাছে বিদেশেই চলে যাবে?

–না৷ বজুও নিতে চাইছে না৷ কীসব পাসপোর্ট-টোটের ঝামেলা আছে৷বলু আমাকে নবদ্বীপে এক বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে৷ দাদা আপনি? আপনার সঙ্গে‍ তো আর রোজের দেখা হবে না৷ তা হলে‍–

নিঃশব্দ কান্নায় রমেন্দ্রসুন্দরের চোখ চিকচিক করে ওঠে৷ ধরা গলায় বললেন–

— হরু যে এই ছেলের বাপ হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি৷ আরে আমি চলে যাওয়ার পর এ অংশটাও তো তোর৷ আমি বেঁচে‍ থাকতে আমার অংশ ওই প্রোমোটারকে দেব না৷ হয়তো একা এই যক্ষপুরী আগলাতে আগলাতে আমিও যখ হয়ে যাব৷ না হলে এই বয়সে থানা-পুলিশ-আইন-আদালত করে এ অংশ বেচা আটকালাম৷ জানো দামিনী, আমার মরার আগে পর্যন্তও আমি জানব আমার বাপ-ঠাকুর্দার পায়ের ধুলো আমার মাথায় থাকবে৷ আর একটা কথা দামিনী—

— বলুন৷

— বলু ক’টা দিন সবুরও করতে পারলে না৷ এই ফাল্গুন মাসে আমাদের এই বাড়িতে কত ধুমধাম করে পিতৃতর্পণ হতো তা তো তুমি জান৷ এবার আর তারা তর্পণের জলটুকুও পাবে না৷

দামিনীর হাতটা রাখা আছে এই খাটের ওপর৷ এই খাটেই উনি অকালে রাজার মতোই চলে গেলেন৷ একেবারে আচমকা৷ একেবারে‍–

এবার হু-হু করে কেঁদে‍ উঠল দামিনী৷ কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ওর আঁচল৷

বৃদ্ধ রমেন্দ্রসুন্দর হতচকিত৷ অসহায়৷ কোনওরকমে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দামিনীর পিঠে একটা হাত রাখতেই ওপাশ থেকে বলু আর ওর বউ হেনার ঝাঁঝালো গলা যেন এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল বৃদ্ধ বুকের ছাতিটা৷

— বাঃ বাঃ৷ সুন্দর৷ একে ঝামেলা করে বাড়ির অংশ আটকেছে৷ এখন এই অন্ধকার ঘরে ভাইয়ের বিধবা বউয়ের বউয়ের সঙ্গে ফস্টিনস্টি হচ্ছে?বুড়ো ভাম কোথাকার! ডাকব?ডাকব পাড়ার লোকজনকে? দেখাব রাতের অন্ধকারে ভাইয়ের বিধবা বউয়ের সঙ্গে বাতিছাড়া এই ভূতুড়ে ঘরে নোংরামি হচ্ছে?

অন্ধকারে পা কাঁপছে রমেন্দ্রসুন্দরের৷ দামিনীর উচ্চকণ্ঠের কান্না তিনি শুনতে পাচ্ছেন না৷ এ কী বলছে বলু?

অন্ধকারে কিছু ঠাহর করতে পারছেন না রমেন্দ্রসুন্দর৷ দিক ভুল হয়ে যাচ্ছে সব৷ তিনি যেন শুনতে পাচ্ছেন অনেকগুলো কাচ ভাঙার শব্দ৷ তাঁর সর্বাঙ্গে যেন আছড়ে পড়ছে কোদাল-হাতুড়ি আর গাঁইতির আঘাত৷ অশীতিপর বৃদ্ধ রমেন্দ্রসুন্দর তখন কোনও মেঘের ভেলায় কোথায় ভেসে যাচ্ছিলেন– কেউ জানে না৷ নীচে অনেক নীচে পড়ে রইল ওরা৷ এই প্রথম তাঁর মনে হল তাঁর আদরের সেই ময়নাটাও তাঁর সঙ্গী হয়ে সমানে ভেসে চলেছে৷

অঙ্কন: অনুপ রায়

শনিবারের চিঠি, শারদ সংখ্যা, ১৪২২